স্বদেশ ডেস্ক:
আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার বোমা হামলা চলবে— গোয়েন্দা তথ্যের এমন ইঙ্গিতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বরিস জনসন বলেন, বাস্তবিক অর্থেই এমন আশঙ্কা রয়েছে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার পদক্ষেপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ঘোষণা দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা শুরু করে রাশিয়া।
ভারত সফরকালে জনগণ বলেছেন, পুতিনের বিশাল সেনাবাহিনী রয়েছে। তার রাজনৈতিক অবস্থানও জটিল, কেননা তিনি এক সর্বনাশা ভুল করেছেন। তার হাতে এখন একটিই উপায়। তিনি এখন তার ভয়াবহ সব অস্ত্রে ইউক্রেনের নাগরিকদের পিষে ফেলতে চাচ্ছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক মাসে ভ্লাদিমির পুতিন যতই সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখান না কেন, তা ‘কোনো ব্যাপার নয়’। তিনি ইউক্রেনবাসীর কঠিন মনকে পরাজিত করতে পারবেন না ।
ভারতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তা জানতে চান সাংবাদিকরা। রাশিয়াকে চাপে রাখতে মস্কোতে মোদি তার কর্তৃত্ব ব্যবহার করবেন কিনা, বরিসের কাছে এ নিয়েও জানতে চাওয়া হয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বুচায় রুশ সেনাদের চালানো নৃশংসতার বিষয়ে মোদি নিজের বক্তব্যে ‘অটল’। এটা স্পষ্ট যে, তিনি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালিয়েছেন।… সত্যিই তার (পুতিন) কাছে জানতে চেয়েছেন। ভারত শান্তি চায়। দেশটি ইউক্রেন থেকে রাশিয়ানদের বিদায় চায়। আমিও এর সঙ্গে একমত।”
আগামী সপ্তাহেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্রিটিশ দূতাবাস খুলছে বলেও জানান বরিস।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, প্রতি মাসে ইউক্রেনের ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ অর্থ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের একটি ফোরামে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
জেলেনস্কি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের অবিলম্বে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে মস্কোর সঙ্গে অবিলম্বে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। তার অভিযোগ, কৃষ্ণসাগরের ইউক্রেনীয় বন্দরে রাশিয়ার অবরোধ ইউক্রেনের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়ার এ পদক্ষেপ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও তিনি এখনো শান্তির আশা পোষণ করেন। অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ক্রেমলিন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
টানা প্রায় দুই মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সামরিক বাহিনীর এ আগ্রাসনে ভবন ও অবকাঠামোগতভাবে ইউক্রেনের ক্ষতি প্রায় ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।
তিনি এও বলেছেন, ‘যুদ্ধ এখনো চলছে এবং অবশ্যই ক্ষতির পরিমাণও আরও বাড়বে।’ খবর রয়টার্সের।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, রুশ আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইউক্রেনের পুনর্নির্মাণের কিছু খরচ রাশিয়াকে বহন করা উচিত। তার ভাষায়, ‘এটি স্পষ্ট যে ইউক্রেনে পুনর্নির্মাণের ব্যয় অনেক বেশি হতে চলেছে।’
এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে জব্দ রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থও ইউক্রেন পুনর্গঠনের কাজে লাগাতে আগ্রহী মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। তিনি বলছেন, ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ করা রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবহার করা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হতে পারে। তবে এর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা ও চুক্তির প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে সম্মেলনে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দেওয়া ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন, ইউক্রেনের জিডিপি ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া রুশ আগ্রাসনের কারণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইউক্রেনের মোট ৫৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লোকসান হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রুশ আগ্রাসনের কারণে ডেনিস শ্যামিহাল যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরেছেন তা ইউক্রেনের অর্থনীতির আকারের তিনগুণ বেশি। ২০২০ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতির আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার।